জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: সাত ভাইবোনের টানাটানির সংসার। নূন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। পরিবারের অন্ন জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন বাবা-মা। সেখানে ছেলের পড়াশোনার খরচ দেয়া মানে তাদের পরিবারের এক অন্যরকম বিলাসিতা। তবে দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না মনিরুল ইসলাম। অভাবের মাঝেও খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। পড়াশোনার খরচ জোগাতে অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেছেন তিনি। বছরখানেক কাঠমিস্ত্রির সহকারীও ছিলেন। আসবাবের এক দোকানেও কাজ করেছেন।
এভাবেই এসএসসি জয় করেছেন তিনি। কিন্তু জীর্ণ শরীরে কাজ করতে কষ্ট হয়। ওস্তাদ যা তা বলে। তাই এসএসসি পাস করে ঢাকায় একটা ওষুধ কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ নেন। এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবন এখানে এসে ডানা মেলে ধরতে শুরু করে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাতক্ষীরার অঁজ পাড়াগাঁয়ের সেই ছেলেটিই এখন বিসিএস
ক্যাডার হয়ে স্বপ্ন জয় করেছে। তিনি এখন মাদারীপুর সরকারি কলেজের লেকচারার। মনিরুল স্মৃতিচারণ করে সেদিনের, সাতক্ষীরায় নলতা মাজারের এক খাদেম তাকে পড়ালেখা করতে সহায়তা করেন। তখন ঢাকা থেকে আবার সাতক্ষীরায় চলে আসি। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।’ সেখান থেকে ৩৫তম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ পান মনিরুল।
শপথ করে বলছি, সমাজের কাছে হেরে যেতে চাই, এই সমাজটিকেই জেতাব বলে। এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে মনিরুল বলেন, দিনমজুর থেকে আমি বিসিএস ক্যাডার হয়েছি। বলতে কোনো লজ্জা নেই। দিনমজুর, কাঠমিস্ত্রি অথবা বর্গাচাষি কোনো পরিচয় নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় মনিরুলের চোখেমুখে। মনিরুলরা জেগে থাক, এগিয়ে যাক, স্বপ্নজয়ীদের পথেয় হয়ে থাক।